Headlines
Loading...
লোডশেডিং কেন হয় ?

লোডশেডিং কেন হয় ?

বর্তমান মানব সভ্যতার অন্যতম এক আশীর্বাদ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ আমাদের জীবনকে যতটা সহজ করেছে তা অন্য কোন প্রযুক্তি করতে পারেনি। বরং অধিকাংশ প্রযুক্তি এই বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুতের একটি বিরম্বনা হলো লোডশেডিং। লোডশেডিং হলেই আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারের উপর ভীষণ বিরক্ত হই। তবে সত্যি কথা বলতে লোডশেডিং এর জন্য সবসময় কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা যায়না। মাঝে মাঝে সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই লোডশেডিং করতে হয়। লোডশেডিং জনজীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসলেও জাতীয় স্বার্থে তা বেশ উপকারী। আমরা অনেকেই হয়তো ভাবছি লোডশেডিং কিভাবে উপকারী হতে পারে? লোডশেডিং কেন হয় এবং কিভাবে তাপ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে?

লোডশেডিং কেন হয়

বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় যদি উৎপাদন কম হয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদনও কম হয় তখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে এই বাড়তি চাহিদাকে লোডশেডিং এর মাধ্যমে উৎপাদনের সাথে সমন্বয় করা হয়। এই সমন্বয় সাধনের কাজটি না করলে সমগ্র বিদ্যুৎ গ্রিড ব্ল্যাকআউটের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। মনে করুন এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ল 7 হাজার মেগাওয়াট। এই মুহূর্তে উৎপাদন হচ্ছে 7 হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি হবে 50 হার্জ। এটা হল বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বাভাবিক অবস্থা কিন্তু এখন যদি আপনার বাসার টিভি বন্ধ করে দেন তাহলে লোড কিছুটা কমে যাবে। এরকম ভাবে আপনার প্রতিবেশী সহ অনেকেই বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে দিল। তখন দেখা গেল যে, মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানে লোড হয়ে গেল সাড়ে 6,000 মেগাওয়াট। কিন্তু এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে 7,000 মেগাওয়াট। তাহলে 500 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সম্পূর্ণ বৃথা যাবে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি হবে 50.7 ফ্রিকোয়েন্সি। যদি 50 হাজারের বেশি হয় তার মানে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জমা করে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রচুর জ্বালানি এবং অর্থ খরচ হচ্ছে চাহিদার তুলনায় বেশি।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে অনেক সম্পদের অপচয় হয়। সেজন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করে দেয়। মনে করুন উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে সাড়ে 6 হাজার মেগাওয়াট করা হলো। এখন বিদ্যুৎ এর ফ্রিকোয়েন্সি 50 হয়ে যাবে তার মানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলো কিছুক্ষণ পরে আবার উল্টো চিত্র ঘটে। হয়তো কোন কারখানা এতক্ষণ বন্ধ ছিল সেই কারখানা চালু করা হলো। তার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে হয়ে গেল7,500 মেগাওয়াট। তখন বিদ্যুৎ এর ফ্রিকোয়েন্সি হয়ে যাবে 49.2 ফ্রিকোয়েন্সি। যদি পঞ্চাশের নিচে নামে তার মানে বুঝতে হবে এই মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এখন হয়তো বলতে পারেন তাহলে বন্ধ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু না। এখানেই হলো বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মূল সমস্যা ইচ্ছা করলে কোন পাওয়ার প্লান্ট মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করা যায়। কিন্তু চাইলেই নিমিষের মধ্যে পাওয়ার প্লান্ট আবার চালু করা সম্ভব। স্থায়ীভাবে এই পাওয়ার প্ল্যান গুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এরকম ভাবে দেশের সবগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কম ফ্রিকোয়েন্সির জন্য সকল পাওয়ার প্লান্ট যদি স্থায়ীভাবে নষ্ট না হয়।  তাহলে অনেক বড় বিপদ। এই অবস্থাকে বলা হয় ব্ল্যাকআউট। তার মানে পুরো দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্ল্যাক আউট হলেও সারা দেশের বিদ্যুত্ সংযোগ পুনরায় চালু করতে 16 ঘণ্টা থেকে এক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

2014 সালে বাংলাদেশে ব্ল্যাকআউটের মতো ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। সে বছর নভেম্বর 11 তারিখ সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে নভেম্বরের 2 তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই বিষয়টি অনেক বড় ও ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় এর জন্যই মূলত লোডশেডিং করা হয়। মনে করুন এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা 7,500 মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে 6 হাজার মেগাওয়াট এখন নতুন পাওয়ার প্লান্ট চালু হবার আগ পর্যন্ত বাড়তি যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই কোনো না কোনোভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। তখন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কোন কোন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এটাই আমরা বলি লোডশেডিং। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে লোডশেডিং করা হয়। এর ফলে দেশের সামগ্রিক চাহিদা মাতকা অনেকটা কমে আসে। নির্ধারিত অঞ্চল ভিত্তিক 200-500 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে আনার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভারসাম্য আনা হয়।

লোডশেডিংয়ের সাধারন মানুষের অনেক ভোগান্তি হলেও দেশের মূল্যবান বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি হারানো যায়। তাই লোডশেডিং জাতীয় স্বার্থে একটি জরুরী পদক্ষেপ। সিডিউল লোডশেডিং অনেক সময় বিভিন্ন গ্রিড সাবস্টেশন কে আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট পরিমান বরাদ্দ দেওয়া থাকে। সেই বরাদ্দ যদি চাহিদার তুলনায় অনেক কম হয়। তখন অল্প বিদ্যুৎ দিয়ে কোন এলাকার সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত ট্রেনিং করতে হয়। এই ধরনের লোডশেডিং জনগণের জন্য খুবই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।