Headlines
Loading...
দিল্লি জামে মসজিদ সম্পর্কে জানুন

দিল্লি জামে মসজিদ সম্পর্কে জানুন

দিল্লি জামে মসজিদ দিল্লিতে অবস্থিত। ভারতের অন্যতম বৃহৎ একটি মসজিদ। মুঘল সম্রাট শাহজাহান 1644 সাল থেকে 656 সালের মধ্যে মুঘল রাজধানী শাহজাহানাবাদ এই মসজিদটি তৈরি করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের আজ পর্যন্ত এটিই ছিল সাম্রাজ্যের ভারতের ইসলামিক শক্তি এবং ঔপনিবেশিক শাসনের প্রবেশের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের সময় জামে মসজিদ রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পুরান দিল্লিতে থাকা মসজিদ দিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মসজিদের 2 টি নাম রয়েছে। প্রথমটি হলো মসজিদ জাহান্নামা যার অর্থ পৃথিবীর প্রতিবিম্ব মসজিদ এই নামটি দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান সাধারণ মানুষের দেয়া।

দিল্লি জামে মসজিদ সম্পর্কে জানুন

আরেকটি নাম হল জামে মসজিদ। অনেকে জামা মসজিদ নামে ডাকে। মসজিদে জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় বলে একে জামে মসজিদ জামা মসজিদ বলা হয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহান শাহজাহান আমাদের সবচেয়ে উঁচু স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এমনকি শাহজাহান মসজিদ নির্মাণের জন্য তার প্রাসাদের চেয়েও উঁচু জায়গাটায় করেন। মসজিদের নকশা করেছিলেন তৎকালীন সময়ে মসজিদকে অনেকটা দূর্গের মত করে নির্মাণ করার প্রবণতা ছিল। এই মসজিদের নকশা লক্ষ করা যায় তৎকালীন সময়ে। মসজিদটি নির্মাণ করতে প্রায় 10 লাখ রুপি খরচ হয়। পারস্য এবং ইউরোপের প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেছে। মসজিদ নির্মাণের তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাহজাহানের আব্দুল্লাহ খান এবং শাহজাহানের পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক 16 সালের জুলাই মাসের তেইশ তারিখে পাকিস্তান থেকে আগত সৈয়দ আবুল হোসেন বুখারী মসজিদ উদ্বোধন করেন। তিনি মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দিল্লি জামে মসজিদ শাহজাহানের শাসন আমলে নির্মিত সর্বশেষ স্থাপত্য বর্তমানে মসজিদে জাহান্নামা দিল্লির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুই ঈদে সকল মুসল্লির নামাজ পড়তে একত্রিত হন।

দিল্লি জামে মসজিদ একটি জীবন্ত ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ অন্য যে কোন ঐতিহাসিক ভবনের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ এই মসজিদে বিচরণ করে। শুধু মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা এই মসজিদের আঙিনায় আশ্রয় নিতে পারে। শুধু ভারতেই নয় সমগ্র বিশ্বের পর্যটকদের কাছেই এক জনপ্রিয় আকর্ষণ। দিল্লি জামে মসজিদ নির্মিত মসজিদ গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম মসজিদ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া মসজিদ নির্মাণ এবং চুনাপাথরের সর্বোত্তম ঘটানো হয়েছে তৎকালীন সময়ে। এটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ মসজিদের বাইরের অংশ এবং উঠান ফতেপুর সিক্রির জামে মসজিদ এর অনুকরণে নির্মিত। মসজিদের ভেতরের অংশ আগ্রার জামে মসজিদের সাথে মিল রয়েছে। দিল্লি জামে মসজিদ প্রকৃতপক্ষে একটি উন্মুক্ত মসজিদ। এর প্রধান প্রার্থনায় প্রার্থনায় দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ উপর তিনটি মার্বেলের গম্বুজ আছে। যার সোনার তৈরি। মসজিদের গম্বুজ মিনার রয়েছে। এই মসজিদে ঢোকার জন্য রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ। পূর্বপাশের দরজাটি সম্রাট এবং রাজকীয় ব্যক্তিদের প্রবেশের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সাধারণ মানুষ প্রবেশ করার জন্য মসজিদের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ ব্যবহার করা হয়।

জামে মসজিদের জায়নামাজ গুলো দিয়ে নকশা করা। মসজিদের দেয়ালে বহু ক্যালিগ্রাফি দেখা যায়। এমনকি লেখার জন্য সরাসরি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বহু মূল্যবান এবং মূল্যবান ধাতু এসব কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে সে গুলো হারিয়ে গেছে। এরকম ছোটখাটো গ্রহণের জন্য তৎকালীন সময়ে 10 লক্ষ রুপি খরচ হয়েছিল। দিল্লি জামে মসজিদের মুসল্লির একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। ভারতের বহু সম্ভ্রান্ত মুসলিম মসজিদ সংস্কারের জন্য বহু অর্থ দান করেছেন। 886 সালে রামপুরা মসজিদে মেরামতের জন্য এক লক্ষ 55 হাজার 926 সালে, হায়দ্রাবাদের নিজাম এক লক্ষ রুপি দিয়েছিলেন। মসজিদ সংস্কারের জন্য 948 সালে হায়দ্রাবাদের নিজাম সমাজের কাছে মসজিদের চারভাগের একভাগ মেরামতের জন্য 75 হাজার রুপি দান চাওয়া হয়েছিল। নিজাম এর পরিবর্তে 3 লক্ষ রুপি দান করেন এবং বলেন মসজিদের বাকি অংশ দেখে যেন মনে হয় বৃষ্টি প্রখর রুদ্র এবং দিল্লির ভয়ঙ্কর দূষণের কারণে মুঘল স্থাপত্যের এই রত্ন হুমকির মুখে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার মসজিদ সংস্কার করা হয়েছে। দিল্লির জামে মসজিদের ইমামরা ঐতিহ্যগতভাবে সম্রাট শাহজাহানের নিযুক্ত করা প্রথম ইমাম সৈয়দ আব্দুল গফুর সরাসরি বংশধর তাদেরকে ইমাম বলে অভিহিত করা হয়। এই মসজিদে পরবর্তীতে তিনি ইমাম হবেন তাকে বলা হয় নাই।

ইমাম ডেপুটি মসজিদের ইমামদের নামের শেষে বুখারী যুক্ত থাকে। তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে আগত সেই বিষয়টিকে নির্দেশ করে। অতীতের অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিপাহী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ধারণা করেছিল যে দিল্লির মসজিদ গুলোতে পরিকল্পনার মাধ্যমে মুসলিমরা বিদ্রোহ করেছিল এর ফলে ধ্বংস করে দেয় এবং সকল মসজিদে মুসলিমদের ধর্মীয় সভা নিষিদ্ধ করে। দিল্লি জামে মসজিদ বাজেয়াপ্ত করে এবং এই মসজিদের সকল ধর্মীয় ব্যবহারে বাধা দেয় তারা। মসজিদ ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু শেষমেশ ইংরেজরা জামে মসজিদ এবং ইউরোপিয়ান সৈন্যদের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে যাচ্ছিল মসজিদের জন্য অবমাননাকর এবং অপবিত্র কাজ ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন ব্রিটিশরা ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম দের আবেগকে আঘাত করার জন্যই এই মসজিদকে সামরিক হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। 862 সালের ইংরেজদের কার্যক্রমের প্রতি মুসলিমদের বাড়তে থাকলে আবার মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সে সময় ব্রিটিশরা মুসলিমদেরকে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। এই মসজিদ প্রার্থনার কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং ইংরেজদের উপর নজরদারি করবে। দিল্লির সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে জামে মসজিদ পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। উপনিবেশিক শাসন হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও হিন্দুরা প্রায়ই দেশে মুসলিমদের সাথে উপনিবেশিক বিরোধী একাগ্রতা প্রকাশ করত। ভারতের উত্তরপ্রদেশের রামপুরে থাকা একটি বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মাদ্রাসা। 866 জন বিশিষ্ট ইসলামী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন।