ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর থেকে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি, ২০২৫ সালের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে যে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এমনকি ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবিও উঠেছে। এই প্রবন্ধে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি, ঐতিহাসিক পটভূমি এবং এই গুজবের সত্যতা বিশ্লেষণ করব।
পাহালগাম হামলা ও তার পরবর্তী ঘটনা
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে, সীমান্ত বন্ধ করে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সিমলা চুক্তি, বাণিজ্য এবং ভিসা স্থগিত করেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) টানা আট দিন রাতে গোলাগুলি হয়েছে, যদিও এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে গুজব
সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে ৭ মে, ২০২৫-এ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এবং ভারতের তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে, পাকিস্তান পাঁচটির দাবি করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৯-৩০ এপ্রিল রাতে ভারতের চারটি রাফাল যুদ্ধবিমান পাকিস্তান সীমান্তের কাছে এলে পাকিস্তানের J-10C যুদ্ধবিমান এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম তাদের রাডার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করে, ফলে তারা শ্রীনগরে জরুরি অবতরণ করে। এই ঘটনায় কোনো বিমান ধ্বংস বা হতাহতের খবর নিশ্চিত হয়নি। সামাজিক মাধ্যমের দাবিগুলো তথ্যপ্রমাণের অভাবে গুজব হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান বিরোধের ঐতিহাসিক পটভূমি
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ কাশ্মীর। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর কাশ্মীর নিয়ে প্রথম যুদ্ধ হয়, যা নিয়ন্ত্রণ রেখার সৃষ্টি করে। এরপর ১৯৬৫ সালে দ্বিতীয় যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে তৃতীয় যুদ্ধ হয়, যেখানে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা, যেমন ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। কাশ্মীর ছাড়াও ধর্মীয়, আদর্শিক এবং ভূ-রাজনৈতিক পার্থক্য এই বিরোধকে তীব্র করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী, যা বড় ধরনের সংঘাতের সম্ভাবনাকে সীমিত রাখে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক ভারতের কৌশলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সংঘাত নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সবসময়ই সংবেদনশীল। পাহালগাম হামলার পর বর্তমান উত্তেজনা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি। সামাজিক মাধ্যমে যুদ্ধ এবং রাফাল ধ্বংসের গুজব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আমাদের দায়িত্ব হলো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উপর নির্ভর করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে কথা বলা। কাশ্মীর সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ছাড়া এই বিরোধের অবসান কঠিন।