War India vs Pakistan - ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ ২০২৫: ক্ষতির হিসাব, ইতিহাস আর কেন এই লড়াই?

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে আবারও যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছে। ২০২৫ সালের মে মাসে শুরু হওয়া এই সংঘাতে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা আর ধ্বংসলীলা চলছে। কাশ্মীর নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা বিরোধ এবার পৌঁছে গেছে এক ভয়াবহ পর্যায়ে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, এই যুদ্ধে কোন দেশের কী ক্ষতি হলো, টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ কত, আর কেন এই যুদ্ধের সূত্রপাত—সেই ইতিহাস সম্পর্কে জানব।

War India vs Pakistan - ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ ২০২৫: ক্ষতির হিসাব, ইতিহাস আর কেন এই লড়াই?

যুদ্ধের শুরু: কীভাবে আগুন জ্বলল?

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই হামলায় ২৬-২৮ জন বেসামরিক মানুষ, বেশিরভাগই পর্যটক, প্রাণ হারান। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF), যারা লশকর-ই-তইয়েবার সঙ্গে যুক্ত বলে ভারতের দাবি। ভারত সরাসরি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। অনেক দেশের সন্দেহ এই ঘটনাটি ভারতে ঘটিয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তারা পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে।

এই হামলার পর ভারত কড়া পদক্ষেপ নেয়। পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয়, সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। ৩ মে পাকিস্তান একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করে, আর ভারত সামরিক মহড়া শুরু করে। অবশেষে, ৬ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা করে, আর এভাবেই যুদ্ধের সূচনা হয়।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় থেকেই চলে আসছে। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেন, আর পাকিস্তান সেটা মেনে নিতে পারেনি। এরপর ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ হয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলা, ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার মতো ঘটনাও দুই দেশের সম্পর্কে বিষ ঢেলেছে।

ক্ষতির হিসাব: কে কত হারাল?

এই যুদ্ধে দুই দেশই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রাণহানি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, আর অবকাঠামোগত ধ্বংসের পরিমাণ ভয়াবহ। চল, একটু বিস্তারিত দেখি:

ভারতের ক্ষতি

  • প্রাণহানি ও অবকাঠামো: পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন নিহত হয়। একটি সামরিক ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস হয়।
  • সামরিক ক্ষতি: পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতের ২-৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে তিনটি রাফায়েল যুদ্ধবিমানও আছে। একটি রাফায়েলের দাম প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন রুপি (৭.৫ বিলিয়ন ডলার), মোট ক্ষতি ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: ভারতের রুপির মান ৪৫% পর্যন্ত কমে গেছে। প্রযুক্তি খাতে ৯০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমছে, শেয়ার বাজার ধসে গেছে।

পাকিস্তানের ক্ষতি

  • প্রাণহানি ও অবকাঠামো: ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদ, কোটলি ও পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে ৩১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। একটি মসজিদ ধ্বংস হয়, বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।
  • সামরিক ক্ষতি: পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করে, তারা ভারতের কয়েকজন সেনাকে আটক করেছে। তবে তাদের নিজেদের সামরিক ক্ষতি নিয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: পাকিস্তানের অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দেশের ৭৭% রাজস্ব যুদ্ধে খরচ হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য।

তুলনামূলক ক্ষতি

ভারতের অর্থনীতি পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বড়, তাই টাকার অঙ্কে ভারতের ক্ষতি বেশি দেখা গেলেও, পাকিস্তানের অর্থনীতি এই ধাক্কা সামলাতে পারছে না। পাকিস্তানের ক্ষতি তাদের জিডিপির তুলনায় অনেক বেশি। উভয় দেশেরই সামরিক ও বেসামরিক ক্ষতি ভয়াবহ, আর পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।

ইতিহাসের পাতা: কেন এই যুদ্ধ?

ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগের সময় থেকে শুরু। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হয়, আর কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। প্রথম যুদ্ধ হয় ১৯৪৭-৪৮ সালে। এরপর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ ব্যর্থ হলে আরেকটি যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়ে, যার ফলে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম হয়। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধও কাশ্মীরকেন্দ্রিক ছিল।

কাশ্মীর ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, আর রাজনৈতিক উত্তেজনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও খারাপ করেছে। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে। এই যুদ্ধের মূলে কাশ্মীরই মূল কারণ, তবে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয় এটাকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ হিসেবে আমাদের এই যুদ্ধ নিয়ে চিন্তার কারণ আছে। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের স্বাধীনতায় সাহায্য করেছিল, তবে এখন ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন চলছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ছে। এই যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, আর আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ২০২৫ শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়ছে। প্রাণহানি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, আর অবকাঠামোগত ধ্বংসের পাশাপাশি পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় মাথাচাড়া দিচ্ছে। কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ সমাধান না হলে এমন সংঘাত বারবার হবে। আমরা চাই, শান্তি ফিরে আসুক, আর এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিতে বাঁচুক। তুমি কী মনে কর, এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে? কমেন্টে জানাও!


Previous Post Next Post